দীর্ঘদিন স্বার্থের দ্বন্দ্বে বিভক্ত ছিল উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। নব-গঠিত উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমেছেন ক্ষমতাসীনরা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তেজনা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয়, দলের নেতাকর্মীদের মূল ধারার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ক্ষমতাসীনদের অনেকে বরং বলছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্য জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাই তারা এখন থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথ দখলে রাখতে চায়।
উখিয়ার রাজনৈতিক সচেতন মানুষেরা বলছেন, দীর্ঘদিন একটি দল ক্ষমতায় থাকায় সরকারের ভেতরে ও বাইরে অনেক ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যসহ অনেক কিছুই সরকার চাইলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর প্রভাব পড়েছে সব জায়গায়।
র্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাঞ্জা, বিএনপির নেতাকর্মীদেরগুম-খুন আন্দোলনে সহিংসতা, দ্রব্যসামগ্রীর লাগামহীন উর্ধ্বগতি, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ঘিরে দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ, ভিপি নুরসহ সাত দলীয় ঐক্যের রাজপথমুখী আন্দোলন- মন্ত্রীদের আচরণ নানান ইস্যুতে সরকারে অস্বস্থি বিরাজ করছে।
অনাকাঙ্খিত এসব ইস্যুতে এক ধরনের চাপেই পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। একের পর এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। আবার কূটনৈতিক মহলের চাপ বাড়ছে। এই চাপ সামাল দেয়াই এখন সরকারের চ্যালেঞ্জ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন পথে হাঁটবে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ- এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে দলটির সূত্র বলছে, দলকে আরও শক্তিশালী করতে নানান উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে দলের সম্মেলন সম্পন্ন করেছে। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকেন্দ্রীক কোনো তান্ডব চালালে রাজনৈতিকভাবে জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে উখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এবং পরে কোটবাজার ও সোনারপাড়া এলাকায় দলীয় সমাবেশে বক্তারা বিএনপির কক্সবাজার জেলা সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী এবং উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী,সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, উখিয়ার রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না। এমন নানান বক্তব্য আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে ২১ আগস্ট ৩ টায় উখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হল রুমে উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ও অঙ্গ,সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে আগামী দিনের করনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করবেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এখানে হুমকি-ধমকি দিয়ে খুব একটা কাজ হবে না। উখিয়া-টেকনাফের মাটি বিএনপির ঘাঁটি। ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশে উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। জ্বালানী তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সকল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশ কর্তৃক গুলি করে ছাত্রনেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিমকে হত্যার প্রতিবাদে ২২ আগস্ট সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনীতির মাঠ হঠাৎ সরগরম হয়ে উঠেছে। সভা সমাবেশ থেকে ছাড়ছে নানা হুঙ্কার। নেতাদের মুখে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়।
নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচণ আদায়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে আর ছাড় নিতে নারাজ বিএনপি। দলটি আর কালক্ষেপন না করে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের দাবি আদায়ে হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছে।
পাঠকের মতামত